নিজস্ব প্রতিবেদক :: পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির রেশ কাটতে না কাটতে আবারো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে সিলেটে। মে দিবস এবং সাপ্তাহিক দুদিনের ছুটি পেয়ে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেছেন সিলেটে। বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্রসহ প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা জাফলং, সাদা পাথর, লালাখালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ করছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা। টানা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় আবাসিক হোটেলগুলোতে কিছুটা রুম সঙ্কটও ছিলো।
ঐতিহ্যবাহী সিলেট সবুজ চা বাগান, পাহাড়-টিলা, স্বচ্ছ জলধারার নদী, জলপ্রপাত এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের জন্য সারাদেশে পরিচিত। সিলেটকে বলা হয় পর্যটন নগরী। সিলেটে রয়েছে মন মাতানো অনেক পর্যটন স্থান। সবুজের সমারোহ আর টিলা বেষ্টিত পাহাড়, শীতল জল কোনো কিছুরই কমতি নেই সিলেটে। প্রকৃতিপ্রেমী ও ইতিহাসপ্রেমী কিংবা আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার অধিকারীরা সময়-সুযোগ পেলেই চলে আসেন সিলেটের বাতাস গায়ে মাখতে। এ অঞ্চলের রোমাঞ্চকর প্রাকৃতিক পরিবেশও দারুন উপভোগ্য।
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জাফলং চা বাগান, জাফলং আগুন পাহাড়, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, পাঙথুমাই জলপ্রপাত, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, লালাখাল, ডিবির হাওর, সংগ্রাম পুঞ্জি, লক্ষণছড়া, লোভাছড়াসহ আরও বিভিন্ন মনোলোভা স্থান। এরমধ্যে সিলেট নগরী ও শহরতলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ওলিকুল শিরোমনী হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার, এমএজি ওসমানী মিউজিয়াম, লাক্কাতুরা চা বাগান, ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ, সুরমা পারে অবস্থিত ঐহিত্যবাহী আলী আমজদের ঘড়ি, কিনব্রিজ, জিতু মিয়ার বাড়িসহ এমন অনেক দর্শনীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে।
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, বুধবার রাত থেকে সিলেটের আশপাশের জেলার পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। গভীর রাতের মধ্যে এই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে প্রবেশ করেন পর্যটকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিলেট নগরীর পার্শ্ববর্তী লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, তারাপুর ও দলদলি চা বাগানে ছিল বাড়তে থাকে পর্যটকদের ভীড়। কেউ কেউ প্রথমবারের দেখায় প্রেমে পড়েন চা বাগানের সৌন্দর্যের।
পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছেন, যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং বাস টার্মিনালে নিয়মিত মনিটরিংও করা হচ্ছে। সবরকমের বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সিলেটের বাইরে থেকে ঘুরতে আসা লোকজন যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সেই ব্যাপারেও সর্তকতা জারি করা হয়েছে।
সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট বিভাগে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই পর্যটক নির্ভর। মে দিবসের ছুটি ও সপ্তাহিক ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টগুলো পর্যটকে ভরপুর। সিলেটের বাইরের লোকজন আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখছেন। বিশেষত বড় হোটেল ও রিসোর্টগুলোর কোনো কক্ষই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আর ফাঁকা পাওয়া যায়নি।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে সিলেটে ঘুরতে আসা আলআমিন আহমদ বলেন, সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি সিলেটের প্রেমে পড়ে যাই। তাই সংক্ষিপ্ত এই ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি প্রথমবার চা বাগানে এসেছি। এর আগে ছবিতে, ভিডিওতে যেরকম দেখেছি কিন্তু বাস্তবে এর রোমাঞ্চ আরো দ্বিগুণ।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সাদা পাথরে পর্যটকদের ভিড় থাকে। এদিকে মে দিবসসহ তিন দিনের ছুটি থাকায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক সাদা পাথর বেড়াতে আসছেন। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নজরদারি ও টহল পুলিশিং জোরদার রয়েছে। বুধবার রাত থেকে পর্যটকের আগমন শুরু হয়। এটা শনিবার পর্যন্ত চলবে আশা করি।
Leave a Reply